“অমর নাথ স্মৃতি সাহিত্য পুরস্কার”
“ঘুম ঘুম চাঁদ”
-রাখী চক্রবর্তী
“দিনের শেষে ঘুমের দেশে”
ক্লান্ত শরীর বিছানায় বসলেই চোখ জুড়ে ঘুম চলে আসে,কিন্তু পরিপাটি করে শোওয়ার ব্যবস্থা করলেই ঘুম উধাও হয়ে যায়।
সারাদিনের কাজ,ব্যর্থতা, হাসি মজা সব মগজের এক প্রান্তে রেখে ঘুমকে প্রেমিক প্রেমিকার মতো জড়িয়ে ধরে ভালবাসতে হয় তবেই নিশ্চিন্তের ঘুম ঘুমানো যায়।
ফুটপাথে যার শুয়ে থাকে তারা চাঁদকে দেখতে দেখতে ঘুমিয়ে পড়ে,চিন্তা ভাবনা নেই,হারিয়ে যাওয়ারও কিছু নেই ওদের,দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী ওরা, আমরা তাই ভাবি।
ঘুম যে অনেক প্রকারের হয় সেটা ওরা জানলেও মাথাঘামায় না ।
যেমন ভাতঘুম, রুটি ঘুম, বিরিয়ানি ঘুম।
কতো রকমের যে ঘুম হয়।আবার চোর ,ডাকাত ,প্রেমিক প্রেমিকা
এনাদের ঘুম একটু অন্য রকমের।
গেরস্থদের দুপুর বেলার ভাত ঘুম অনেকটা এই রকম গৃহকর্তা গৃহকর্ত্রী মুখে এক খিলি পান গুজে বিছানায় এলিয়ে পড়েন।তারপর ভাত ঘুম ।ঘুম থেকে ওঠার পর চোখ মুখ একটু ফোলা ফোলা লাগে ।বেশ লাগে দেখতে
,মানে ঐ বাড়ির কর্তা গিন্নি এনাদের কথা বলছি আর কি।
ছেলে ,বৌমা ,মেয়ে অফিসে টিফিন টাইমে চেয়ারে হেলান দিয়ে একটু রুটি ঘুম দিয়ে দেন।মানে দুটো কি তিনটে রুটির খাওয়ার জন্য ঘুম বরাদ্দ দশ মিনিট । অবশ্য অফিসের বসদের দিনে ঘুমানো বারণ আছে,টানটান উত্তেজনা ওনাদের মধ্যে কাজ করে কি দিন কি রাত,
এরপর এক বিশেষ মুহুর্ত আসে বড়লোক বা মধ্য বিত্ত চাকুরিজীবি দের ছুটির দিনে ,মর্টন বা চিকেন বিরিয়ানি খেয়ে বিরিয়ানি ঘুম চলবে টানা চার ঘণ্টা ।
চিন্তা ভাবনার কোন বালাই থাকে না এই ঘুমে ।ফলে স্বপ্নরাও আসে না ।লালপরী নীলপরীরা রাতের ঘুমে আসে ।দিন ওদের পছন্দ না।
যে ছেলেটা বা মেয়েটা
সারাদিন কাজের পর রাতের বেলায় খাতা পেন নিয়ে লিখতে বসে ছাদে বা বেড়ার ছাওনির এক চিলতে ঘরে মনে মনে কবি হওয়ার স্বপ্ন দেখে ,
ঘুম ঘুম চাঁদ তাদের কাছে খুব রোমান্টিক ।পেটে ক্ষুধার জ্বালা থাকে পরিবারের ভার থাকে সারা শরীর জুড়ে ।কিন্তু চোখে ঘুম নেই ।চাঁদকে নিয়ে কবিতা লিখে যায় একটার পর একটা,যদি প্রকাশকের মনে ধরে,কবিতা যদি ছেপে বের হয়,তাহলে মা বাবা আর বলতে পারবে না ছাই কপালে কিছু হবে না,ও সব লেখালেখি বাদ দে,
একমাত্র চোর ডাকাতরা আমাদের শুভাকাঙ্ক্ষী হয়।
আমাদের ঘুম যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে হয় তার জন্য ওরা ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করে।চোর ডাকাত বলে কি ওরা মানুষ না ? ওদের প্রার্থনা কি ঠাকুর শুনবে না?নিশ্চই শোনে ঠাকুর ।নিজেদের চোখের ঘুম নষ্ট করে ওরা মা বাবা পরিবারের পেট ভরায় ।তাই ওদের কাছে ঘুম ঘুম চাঁদ বাতুলতা মাত্র ।
“ঘুম ঘুম চাঁদ ঝিকমিকি তারা ঐ
মাধবীরাত আসে নি কো বুঝি আর জীবনে আমার” বিখ্যাত গান
প্রেমিক প্রেমিকার মনে ঝড় তোলে।ঘুমের দেশে ওরা পৌছে তো যায় ,কিন্তু ঘুম কতটা গাঢ় হয় সেটা ওরা নিজেরাও জানে না।ঘুমের মধ্যে ওরা ঘর সংসার করে পরিপাটি করে । প্রেমিকার খোঁপায় বেলফুলের মালা জড়িয়ে প্রেমিক বলে ,”সারাজীবন তোমার হয়ে থাকবো।সত্যি ,সত্যি, সত্যি তিন সত্যি “।ঐ চাঁদকে সাক্ষী রেখেই চলে ওদের কতো না অঙ্গীকার ।
বৃদ্ধাশ্রমে বসে মা বাবারা চাঁদের দিকে তাকিয়ে হয়তো ভাবে,যে চাঁদকে জন্ম দিলাম, মানুষ করলাম সেই চাঁদই ঘুম কেড়ে নিল।রাত বাড়তে থাকে চাঁদেরও ঝিম আসে।ঘুম ঘুম চাঁদ প্রহর গোনে অপেক্ষা কিছু মিনিটের ।তারপর বিশ্রাম ।
অবাঞ্ছিত মা বাবাদের বিশ্রাম নিতে নেই ,ভাবতেই হবে তাদের সন্তানের কথা।তাই নিজেদের অজান্তে ঘুম পাড়ানির গান গেয়ে ওঠে মায়েরা
“ঘুম পাড়ানি মাসি পিসি আমাদের আসল বাড়িতে এসো,
আসার সময় আমার চাঁদের চোখের
ঘুমটি নিয়ে এসো ”
“খোকা ঘুমালো পাড়া জুড়ালো বর্গী এল দেশে,
মা বাবা তোদের জেগে আজও
তোদের প্রাণের পরশ পেতে”
তারপর আরও রাত বাড়ে আস্তে আস্তে ঘুম ঘুম চাঁদ মেঘের আড়ালে চলে যায়,
রাতের শেষে ঘুমের দেশে বিশ্রাম
নেয় চাঁদ,তারপর ভোর হয় শুরু হয় আমাদের জীবন সংগ্রাম,,দিনের শেষে ঘুমের দেশে